আগামী অর্থবছরের বাজেটে সরকারের উচ্চমাত্রায় ব্যাংকঋণের লক্ষ্যমাত্রা সত্ত্বেও বাজারে অর্থের সরবরাহ কমিয়ে মূল্যস্ফীতি কমাতে জুলাই-ডিসেম্বর’২৩ মেয়াদের জন্য নতুন মুদ্রানীতি নিয়ে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ধরনের মুদ্রানীতিকে নিয়ন্ত্রণমূলক বা সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি বলা হয়।
রবিবার (১৮ জুন) বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এ মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন বলে মুখপাত্র আবুল বশর দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে নিশ্চিত করেছেন।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, সরকারের আর্থিক নীতি অনুযায়ী উন্নয়ন ও পরিচালন ব্যয় পরিকল্পনাকে সহযোগিতা করতেই একটি প্রায়োগিক ও সংবেদনশীল মুদ্রানীতি প্রয়োজন হয়। একইসাথে, কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ ঠিক রাখা, আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্য গতিশীল রেখেই বৈদেশিক মুদ্রার একটি স্থিতিশীল রিজার্ভ ধরে রাখা ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও মুদ্রানীতিতে যথাযথ নীতিসহায়তা দিতে হয়।
গত ১ জুন জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি পূরণে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ব্যাংকঋণ হিসেবে নিবে সরকার। এটি বাংলাদেশ ব্যাংককে সরবরাহ করতে হবে।
এদিকে সরকারের বাড়তি পরিচালন ব্যয় নিয়েও ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। বাড়তি পরিচালন ব্যয় মেটাতে গেলে বাজারে টাকার সরবরাহ বেড়ে যাবে। আর টাকার আধিক্য মানেই হলো নিত্য পণ্যমূল্যের দাম বেড়ে যাওয়া। এবং এ পরিস্থিতিই হলো মূল্যস্ফীতি।
এমনিতেই মূল্যস্ফীতি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। গত মে মাসে নির্ণীত প্রায় ১০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি বিগত ১১ বছরে সর্বোচ্চ। এতে নিম্ন আয়ের মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এদিকে, নতুন এ মুদ্রানীতিতে বিদ্যমান ৯ শতাংশ সুদের হার উঠিয়ে দিয়ে একটি বাজারভিত্তিক প্রতিযোগিতামূলক সুদব্যবস্থা চালু করতে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে।
সুদহার নির্ধারণের এ পদ্ধতিকে শর্ট টার্ম মুভিং এভারেজ রেট বা স্মার্ট নাম দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ প্রসঙ্গে মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক গত মাসে দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, ‘আগামী মুদ্রানীতিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রকাশ করা হবে। আশা করছি আগামী ১ জুলাই থেকে বাস্তবায়ন করা হবে।’
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ পদ্ধতিকে স্পেসিফিক, মেজারেবল, এটেইন্যাবল, রিয়েল এন্ড টাইম বাউন্ড সংক্ষেপে স্মার্ট সুদহারও বলা হয়ে থাকে।
স্মার্ট পদ্ধতি কি?
ট্রেজারি বিল, বন্ডের ছয় মাসের গড় সুদহার বিবেচনা করে প্রতি মাসে একটি রেফারেন্স রেট নির্ধারণ করে দিবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর সঙ্গে সর্বোচ্চ তিন শতাংশ সুদ যোগ করে ঋণ সুদহার নির্ধারণ করতে পারবে বাণিজ্যিক ব্যাংক। নতুন এ পদ্ধতি চালু হলে প্রতিমাসেই গ্রাহকের ঋণের সুদহারে পরিবর্তন আসতে পারে।
২০২০ সালে করোনার অভিঘাত শুরু হওয়ার পর ব্যবসায়ীদের স্বল্প সুদে ঋণ দিতে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া অন্য সকল ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সীমা নির্ধারণ করে দেয় সরকার।
বেসরকারি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীরা বলে আসছেন এ পদ্ধতির প্রয়োগে ঋণের সুদহার বেড়ে যাবে এবং বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিনিয়োগকারীদের কস্ট অব ফান্ডও বেড়ে যাবে।
জুন মাসের ৩০ তারিখে সমাপ্ত হতে যাওয়া মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এই সময়ে মন্দ ঋণ বেড়ে যাওয়ায় অনেকগুলো ব্যাংকের আর্থিক স্বাস্থ্যেরও অবনতি হয়েছে।
আলোচিত সময়ে রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হতে হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংককে। আমদানি কমিয়ে রিজার্ভ ধরে রাখার কারণে দেশের অভ্যন্তরে নিত্যপণ্যসহ জ্বালানি তেলের সরবরাহ সংকটে মূল্যস্ফীতি চরম আকার করেছে।
এছাড়া, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের নিকট থেকে নেয়া ঋণের শর্ত হিসেবে সরকারকে সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নের দিকে যেতে হয়েছে। আর্থিক খাতের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ব্যাংকিং ব্যবস্থা। এক্ষেত্রে সংস্কারের অংশীদার বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সংস্কার কার্যক্রমকেও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্বও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। এমতাবস্থায়, মুদ্রানীতিতে কী থাকছে, কীভাবে সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা হবে- সেদিকেই কৌতুহল সবার।